বহুতল বাড়িতে বিনিয়োগ: লাভের মুখ দেখতে চান? এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন!

webmaster

**

"A bustling street scene in Dhaka, Bangladesh, showcasing a modern, multi-story apartment building. Families are entering and exiting, fully clothed in traditional Bengali attire. Sunlight, vibrant colors, safe for work, appropriate content, fully clothed, professional architecture, natural proportions, high quality."

**

বহুতল আবাসন, বিশেষ করে যেখানে একাধিক পরিবার একসাথে বসবাস করে, এমন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ আজকাল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কিন্তু এই ধরনের বিনিয়োগ করার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা খুব জরুরি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিলে লাভের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে।বর্তমান বাজারে কোন এলাকায় চাহিদা বেশি, ভবিষ্যতে কেমন লাভ হতে পারে, এবং আইনি দিকগুলো কতটা সুরক্ষিত – এই সব কিছু ভালো করে না জেনে বিনিয়োগ করা উচিত না। এছাড়াও, ফ্ল্যাটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, ভাড়াটিয়দের সাথে সম্পর্ক, এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মকানুন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।আমি নিজে দেখেছি, অনেকে শুধুমাত্র বেশি লাভের আশায় না বুঝে বিনিয়োগ করে পরে পস্তাতে হয়। তাই, একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করে, অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিয়ে বিনিয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।আসুন, এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বহুতল আবাসনে বিনিয়োগের আগে যে বিষয়গুলি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবেবহুতল আবাসন বা মাল্টি-ফ্যামিলি হাউজিং-এ বিনিয়োগ করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। এই বিষয়গুলো বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে এবং সম্ভাব্য লাভ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা থেকে আমি এই বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পেরেছি।

ভূমির অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

keyword - 이미지 1

জমির অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।১. জমির অবস্থান : প্রকল্পটি কোথায় অবস্থিত, তার আশেপাশে কী কী সুবিধা রয়েছে (যেমন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থা)। একটি ভালো লোকেশন নিশ্চিত করতে পারে আপনার বিনিয়োগ নিরাপদ।
২.

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : এলাকার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের পরিকল্পনা কী, ভবিষ্যতে এখানে কী কী নতুন সুবিধা আসতে পারে, যা আপনার বিনিয়োগের মূল্য বাড়াতে পারে।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি : এলাকাটি বন্যা, ভূমিকম্প বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ কিনা, তা জেনে নেওয়া উচিত।

ভবনের নির্মাণ গুণগত মান

ভবনের নির্মাণশৈলী এবং ব্যবহৃত উপকরণ দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।১. নির্মাণ সামগ্রী : কী ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন সিমেন্ট, রড, ইট ইত্যাদি। ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হলে ভবনের স্থায়িত্ব বাড়ে।
২.

ডিজাইন এবং পরিকল্পনা : বিল্ডিংয়ের ডিজাইন কেমন, তা কতটা আধুনিক এবং কার্যকরী। এছাড়াও, জরুরি অবস্থার জন্য বিল্ডিংয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা, তা দেখা উচিত।
৩.

নির্মাতার খ্যাতি : যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পটি তৈরি করেছে, তাদের পূর্বের কাজের মান কেমন ছিল, তাদের বাজারে কেমন সুনাম আছে, তা যাচাই করা উচিত।

আইনগত বিষয়াবলী

আইনি জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অনুমোদন সম্পর্কে নিশ্চিত হন।১. জমির মালিকানা : জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। জমির দলিল, পরচা, খাজনা রসিদ ইত্যাদি সঠিক আছে কিনা, তা একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে পরীক্ষা করানো উচিত।
২.

অনুমোদন : বিল্ডিং নির্মাণের জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা, যেমন প্ল্যান পাস, ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট ইত্যাদি, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩.

ঋণ এবং দায় : জমির উপর কোনো ঋণ বা দায় আছে কিনা, তা জানতে হবে। যদি থাকে, তবে তা পরিশোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

আর্থিক পরিকল্পনা এবং বাজেট

একটি সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা বিনিয়োগের ভিত্তি স্থাপন করে।১. মোট বিনিয়োগ : জমি কেনা, নির্মাণ খরচ, আইনি খরচ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচসহ আপনার মোট বিনিয়োগ কত হবে, তা হিসাব করতে হবে।
২.

ঋণ এবং সুদ : যদি আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে সুদের হার, ঋণের মেয়াদ এবং মাসিক কিস্তি কত হবে, তা জানতে হবে।
৩. আয় এবং ব্যয় : ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে আপনার মাসিক আয় কত হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ, ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচ বাবদ কত ব্যয় হবে, তার একটি হিসাব তৈরি করতে হবে।

ভাড়া এবং দখলদারিত্বের হার

ভাড়া এবং দখলদারিত্বের হার আপনার বিনিয়োগের লাভজনকতা নির্ধারণ করে।১. বর্তমান ভাড়া : বর্তমানে ওই এলাকায় ফ্ল্যাটের গড় ভাড়া কত, তা জানতে হবে। এর জন্য আপনি স্থানীয় রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের সাথে কথা বলতে পারেন বা অনলাইন পোর্টালে খোঁজ নিতে পারেন।
২.

দখলদারিত্বের হার : এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা কেমন, কতগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছে এবং কতগুলো খালি আছে, তা জানতে হবে। দখলদারিত্বের হার বেশি হলে আপনার ফ্ল্যাট ভাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
৩.

ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা : ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ভাড়ার হার বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, তা বিবেচনা করতে হবে।

রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা

সম্পত্তির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ তার মূল্য এবং আকর্ষণ বজায় রাখে।১. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ : বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ, যেমন লিফট, জেনারেটর, পাম্প, বাগান এবং অন্যান্য সাধারণ স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কত হবে, তা জানতে হবে।
২.

পরিচালনা কমিটি : বিল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে, কোনো পরিচালনা কমিটি থাকবে কিনা, থাকলে তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা কী হবে, তা জানতে হবে।
৩. মেরামত এবং সংস্কার : ভবিষ্যতে বড় ধরনের কোনো মেরামত বা সংস্কারের প্রয়োজন হলে তার খরচ কিভাবে বহন করা হবে, তা আগে থেকে নির্ধারণ করতে হবে।

ঝুঁকি মূল্যায়ন

বিনিয়োগের ঝুঁকিগুলি মূল্যায়ন করা এবং সেগুলি কমানোর উপায় খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ।১. বাজার ঝুঁকি : অর্থনৈতিক মন্দা, সুদের হারের পরিবর্তন বা অন্য কোনো কারণে ফ্ল্যাটের চাহিদা কমে গেলে আপনার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
২.

আইনি ঝুঁকি : জমির মালিকানা বা নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো আইনি জটিলতা দেখা দিলে আপনার বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩. পরিবেশগত ঝুঁকি : প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পরিবেশ দূষণের কারণে আপনার সম্পত্তির মূল্য কমে যেতে পারে।

বিষয় বিবেচ্য বিষয় করণীয়
ভূমির অবস্থান সুবিধা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এলাকা পরিদর্শন, স্থানীয়দের সাথে কথা বলা, সরকারি পরিকল্পনা দেখা
নির্মাণ গুণগত মান সামগ্রী, ডিজাইন, নির্মাতার খ্যাতি নির্মাণ সাইট পরিদর্শন, ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা, পূর্বের কাজের খোঁজ
আইনগত বিষয়াবলী মালিকানা, অনুমোদন, ঋণ দলিল যাচাই, আইনি পরামর্শ, ঋণমুক্তির প্রমাণ
আর্থিক পরিকল্পনা মোট বিনিয়োগ, ঋণ, আয় ও ব্যয় বাজেট তৈরি, ঋণ পরিকল্পনা, আয়-ব্যয়ের হিসাব
ভাড়া ও দখলদারিত্ব বর্তমান ভাড়া, দখলদারিত্বের হার, ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের সাথে কথা বলা, অনলাইন পোর্টালে খোঁজ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখা
রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খরচ, পরিচালনা কমিটি, মেরামত খরচ হিসাব করা, কমিটির নিয়ম জানা, মেরামতের পরিকল্পনা
ঝুঁকি মূল্যায়ন বাজার ঝুঁকি, আইনি ঝুঁকি, পরিবেশগত ঝুঁকি ঝুঁকি চিহ্নিত করা, কমানোর উপায় বের করা, বীমা করানো

বহুতল আবাসনে বিনিয়োগ একটি জটিল প্রক্রিয়া। উপরে দেওয়া বিষয়গুলো বিবেচনা করে বিনিয়োগ করলে আপনার ঝুঁকি কমবে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়বে।বহুতল আবাসনে বিনিয়োগ করার আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আপনি একটি নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং বিবেচনার মাধ্যমে আপনি আপনার স্বপ্নপূরণ করতে পারেন।

শেষ কথা

বহুতল আবাসনে বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন। আপনার সামান্য সতর্কতা আপনাকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে। শুভ বিনিয়োগ!

দরকারী তথ্য

১. বিনিয়োগের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ রিয়েল এস্টেট পরামর্শকের সাহায্য নিন।

২. জমির কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করার জন্য একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

৩. ঋণের জন্য আবেদন করার আগে বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হার তুলনা করুন।

৪. বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে নিয়মিত পরিদর্শন করুন।

৫. ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট বিক্রি করার পরিকল্পনা থাকলে, এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নিন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ

বহুতল আবাসনে বিনিয়োগের আগে জমির অবস্থান, ভবনের নির্মাণ গুণগত মান, আইনি বিষয়াবলী, আর্থিক পরিকল্পনা, ভাড়া এবং দখলদারিত্বের হার, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করা অপরিহার্য। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে বিনিয়োগ করলে আপনার ঝুঁকি কমবে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়বে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: বহুতল আবাসনে বিনিয়োগের আগে কী কী বিষয় দেখা উচিত?

উ: আমার মনে হয়, বিনিয়োগের আগে লোকেশন, সম্পত্তির আইনি কাগজপত্র, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, এবং ভবিষ্যতের লাভের সম্ভাবনাগুলো খুব ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তাড়াহুড়ো করে বিনিয়োগ করলে ঠকার সম্ভাবনা থাকে।

প্র: ভাড়াটিয়াদের সাথে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

উ: ভাড়াটিয়াদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখাটা খুব জরুরি। নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, তাদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা, এবং সময় মতো সমাধান করা উচিত। আমার পরিচিত একজন নিয়মিত ভাড়াটিয়াদের খোঁজ খবর নেয়, এতে তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

প্র: বহুতল আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কিভাবে কমানো যায়?

উ: রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমানোর জন্য নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, জলের অপচয় রোধ করা, এবং সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু করা যেতে পারে। আমি দেখেছি, অনেকে সম্মিলিতভাবে বাগান তৈরি করে এবং আবর্জনা পুনর্ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে আনে।

📚 তথ্যসূত্র